আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেনা।ফলে আমের যা পুষ্টিগুণ তার থেকে বঞ্চিত হয়।এমন কি সঠিক নিয়মে আম না খাওয়ার ফলে অনেক সমস্যায় ভোগেন। তো তাদের জন্যয় আজকে আমাদের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম নিয়ে।
আমাদের দেশে জাতীয় ফল কাঁঠাল হলেও ফলে রাজা আম। গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে সকলের প্রথম পছন্দ হচ্ছে আম। আম অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ ভরপুর। আম এর অনেক উপকার হয়েছে। আর আমের সঠিক উপকরা পেতে হলে আমাদের আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে হবে।
সূচিপত্র: আজকের আলোচনায় যা যা থাকছে
আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম কথাটি শুনে অনেকে অবাক হবেন। মনেমনে ভাববে আম খাওয়ারও আবার সঠিক নিয়ম আছে। হ্যাঁ বন্ধুরা প্রত্যেকটা জিনিস খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময় রয়েছে। সেগুলো মেনে খাবার খেলে এর সঠিক উপকার পাওয়া যায়। আমে যে সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেটা সঠিক ভাবে আমাদের শরীরে কাজ করবে তখন যখন আম আমার সঠিক নিয়ম মেনে খাবো।
খালি পেটে আম খাওয়া মোটেও উচিৎ নয়। সকালে হালকা কিছু খাওয়ার পর আম খাওয়া উচিত। তাছাড়া আম খাওয়ার পর পানি খাওয়া ঠিক না। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অনেক শুকশো থাকে তাই শরীরে অনেক পানির চাহিদা হয় আর এই আম আমাদের শরীরের পানির চাহিদা মেটাই। এ ছাড়া আমে থাকে ভিটামিন এ,ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও আঁশ। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক উজ্জ্বল করে।
আমের পরিচিত ও প্রকারভেদ
আম হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন রসালো ফল। আমের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা। আমের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। কিন্তু বর্তমানে এটি প্রায় সারা বিশ্বে পাওয়া যায় তবে ভীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এই ফলের উৎপত্তি বেশি হয়। বিশেষ করে ভারত, মায়ানমার পাকিস্তান, চীন এবং বাংলাদেশ এসব দেশে আম উৎপাদন বেশি হয় এবং আম খেতে সুস্বাদু হয়। কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে এবং পাকলে হলুদ ও কিছুটা লালচে হয়। আকৃতিতেও আম বিভিন্ন রকমের হয় কোনটা গোল কোনটা লম্বা।
বাংলাদেশ সহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রকারের আম পাওয়া যায় এবং আমার বিভিন্ন জাত রয়েছে এগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।
ক্ষিরসাপাত: আমের মধ্যে সবার পছন্দের তালিকায় থাকে ক্ষিরসাপাত আম। এই আম স্বাদে ও পুষ্টিগুণী অতুলনীয়। জুন মাসের শুরু থেকে এই আম ভাঙ্গা শুরু হয়।
ল্যাংড়া আম: মাঝারি আকারের এই আমটি খেতে অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। এই আমি আঁশ কম থাকে এবং আমের আটি ছোট হয়।
ফজলি আম: ফজলি আম আকার লম্বা হয়। এই আমের আচার ভালো হয়। ফজলি আম একটু দেরিতে পাকে।জুনের শেষে এবং জুলাইয়ের প্রথম দিকে ফজলি আম পাকা শুরু করে।
বাড়ি-৪ আম : বাড়ি ফোর আম হচ্ছে উন্নত সংকর জাত। আম খেতে অনেক সুস্বাদু। এই আম সংরক্ষণ করে সারা বছর খাওয়া যায়।
আসিনা আম : কাঁচাতে এই আম টক থাকে তবে পাকলে কিছুটা মিষ্টি হয়। এই আমের ও আচার করা হয়। এই আমি জুলায় মাসের শেষের দিকে পাকতে শুরু করে।
হিমসাগরাম: হিমসাগর আম হচ্ছে উন্নত প্রজাতি আম।বিদেশে এই আমার প্রচুর চাহিদা থাকে। এ আমি দেখতে এবং খেতে অনেক সুস্বাদু।
কাঁচা আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
কাচা আম"="ে রয়েছে প্রাকৃতিক কুলিং এজেন্ট যা গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। তাছাড়া প্রচন্ড গরমে এই কাঁচা আম এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। কাচা আমের আম সত্ব সকালের পছন্দের তালিকায় থাকে। তাছাড়া আম সংরক্ষণ করে রাখার জন্য কাচা আম আচার করে সংরক্ষণ করা হয়। কাঁচা আমের আচার অনেকের ফেভারিট ও লোভনীয় খাবার। কাঁচা আমের আচার দেখেলে সকলের জিভে জল আসে।
আরো পড়ুনঃ নিম তেলের উপকারিতা ও ব্যবহার
কাঁচা আমের অনেক পুষ্টিগুন রয়েছে এসব পুষ্টি সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য আমাদের কাঁচা আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে। কচি অবস্থা থেকে কাঁচা আম রান্না করে খাওয়া যায়। তাছাড়া কাঁচা আম বিভিন্ন মশলা যেমন ঝাল,লবণ দ্বারা মেখে ঝাল্লি করে খাওয়া যায়। কাঁচা আম যেভাবে খাওয়া হোক না কেন আম খাওয়ার পর পানি খাওয়া মোটেও ঠিক নয় এতে হজমের সমস্যা হয় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন তরকারির সাথেও আম রান্না করে খাওয়া যায়।
পাকা আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
গ্রীষ্মকাল হচ্ছে ফলের মৌসুম। এ সময় বিভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যায় যেমন আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি। এসব ফলের মধ্যে সকলের প্রথম পছন্দ থাকে আম। আম খাই না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া। তাছাড়া পাকা আমেও রয়েছি অনেক পুষ্টিগুণ। পাকা আম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ক্ষতিকর অ্যাসিড ধ্বংস করে। তাছাড়া আমে থাকে এনটিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করে।
আমে কোন ভিটামিন কি কি পরিমান থাকে
আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানার জন্য আমাদের প্রথমে জানতে হবে আমে কোন ভিটামিন কি কি পরিমাণে থাকে। কারণ আমাদের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী কোন ভিটামিন কত টুকু প্রয়োজন সে অনুযায়ী আম খেতে হবে। এখন তাহলে দেখা যাক আমে কোন ভিটামিন কী কী পরিমাণ রয়েছে তার তালিকা।
প্রতি ১০০ গ্রাম আমে যে পরিমাণ ভিটামিন থাকে তার একটি তালিকা দেওয়া হলো :
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
ক্যালরি ৬০ কিলোক্যালোরি
কার্বোহাইডেট ১৫ গ্রাম
সুগার ১৪ গ্রাম
ফাইবার ১.৬ গ্রাম
প্রোটিন ০.৮২ গ্রাম
ফ্যাট ০.৩৮ গ্রাম
ভিটামিন-এ ৩৮ মাইক্রগ্রাম
ভিটামিন বি৬ ০.১৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ৩৬.৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই ০.৯০ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে ৪.২ মাইক্রোগ্রাম
পটাশিয়াম ১৬৮ মিলিগ্রাম
কপার ০.১১ মিলিগ্রাম
আম খাওয়ার উপকারিতা
আমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টি গুন। যে গুলো আমাদের শরীরে অনেক উপকারে করে। সঠিক নিয়মে আম খেলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার হবে তা আলোচনা করা হলো :
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়: আমে রয়েছে ভিটামিন- এ, ভিটামিন সি যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তেলে বহুগুণ। আম খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- হজম শক্তি বাড়ে: আমে রয়েছে এমন এক ধরনের পুষ্টি গুন ফাইবার যা আমাদের হজম শক্তি বাড়ায়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় : যারা নিয়মিত কোষ্টকাঠিন্যে ভোগেন তারা যদি নিয়মিত আম খান তবে কোষ্ঠকাঠিন্য নতুন আসে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আমের জুড়েমেলা ভার। আম খেলে পায়খানা ক্লিয়ার হয়।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : আমি থাকি আন্টি অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এবং শরীরে কোষ বৃদ্ধি করে।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় : আমে থাকে ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে।
ডায়াবেটিস রোগীর আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
অনেক ডায়াবেটিস রোগী ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার ভয়ে আম খান না কিন্তু তা করা মোটে ও ঠিক না। ডায়াবেটিস রোগীর আম খেলে কোন সমস্যা হবে না। তবে ডায়াবেটিস রোগকে অন্যান্য সাধারণ মানুষের চেয়ে জেনে বুঝে ও আমার সঠিক নিয়ম মেনে আম খেতে হবে। যে সব আম প্রচুর পরিমাণ মিষ্টি সে সব আম বেশি পরিমাণে খেলে ডায়াবেটিস রোগীর সুগার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীকে একটি বা দুইটির বেশি আম খাওয়া উচিত না।
আরো পড়ুন ঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা
ডায়াবেটিস রোগীকে কখনো খালি পেটে আম না। তাদেরকে সব সময় সকালে নাস্তার পর কিংবা দুপুরে খাওয়ার পর আম খেতে হবে। ডায়াবেটিসের রোগীর শরীর ক্ষমতা অনুযায়ী আম খাওয়া উচিত। যে ভালো হয় ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী আম সুগার মেপে খাওয়া।
প্রশ্ন জিজ্ঞাসা (FAQ)?
জনসাধারণ মনে আম খাওয়া নিয়ে যে সব প্রশ্ন সারাক্ষণ ঘুরপাক খায় সেসব প্রশ্ন নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের এই পর্বটি।
ডায়াবেটিস রোগীর কি আম খাওয়া নিষেধ?
মানুষ যেসব প্রশ্ন করে থাকে তার মধ্যে কমন প্রশ্ন হল ডায়াবেটিস রোগীর কি নিষেধ? এর উত্তরে বলব না ডায়াবেটিস রোগীর আম খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ না তবে সুগার মেপে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আম খেতে হবে।
কাদের জন্য আম খাওয়া নিষেধ ?
যাদের এলার্জির জনিত সমস্যা আছে এর জন্য আম খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ না হলেও নিয়ম মেনে আম খেতে হবে।
আম খেলে কি ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়?
এর উত্তর হলো হ্যাঁ আম খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় কারণ আমে থাকে আন্টিঅক্সিডেন্ট।
পাকা আম খেলে কি ওজন বাড়তে পারে?
পাকা আমে থাকে গ্যালারি ও সুগার যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে নিয়মমাফিক আম খেলে এবং কাব্য সং করলে আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
পাকা আম খেলে কি ত্বক উজ্জ্বল হয়?
হ্যাঁ বন্ধুরা পাক আম খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। কারণ আমি থাকি ভিটামিন এ এবং সি যা ত্বকে ময়েশ্চারাইজড রাখে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে।
গর্ভাবস্থায় কি আম খাওয়া উচিত?
গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া উচিত কারণ আমে রয়েছি ভিটামিন কে যা বাচ্চার হাড় গঠনে সাহায্য করে। এবং হাড় মজবুত করে।
সর্বশেষ : আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
শরীর ভালো রাখতে আমাদের সব সময় আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে আম খেতে হবে। বর্তমান মানুষ অনেক স্বার্থ সচেতন তাই তাদের উচিত হবে সঠিক নিয়ম মেনে আম খাওয়া কারণ আমি যে সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে। আমরা সময় অসময়ে অনেক খাবার খেয়ে থাকি প্রয়োজনে অপ্রয়োজন। এটা আমাদের শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বর্তমান সময়ে মানুষ খাওয়ার অভাবে মরে না বরং খাওয়ার অপপ্রয়োগ মরে।
আমি আশা করছি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনেছেন। যদি এই আর্টিকেলটি পরে আপনারা কিছুটা উপকৃত হন তবে আমাদের সার্থকতা। পরবর্তীতে আরো এরকম সচেতনামূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।।
এএন আইটি কেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url